বিশেষ প্রতিবেদন,কলকাতা:অধীর চৌধুরির জোট প্রস্তাবের সঙ্গে সঙ্গে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিলেন মহম্মদ সেলিম। ফলে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে পশ্চিমবাংলায় কংগ্রেস ও সিপিএম তথা বামেদের জোট এক প্রকার চূড়ান্তই হয়ে গেল। শুক্রবার প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করার পরই রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের তীব্র সমালোচনা করার পাশাপাশি সিপিএমের সঙ্গে জোট করে নির্বাচনে লড়াই করার প্রস্তাব দেন অধীর চৌধুরি। আর, প্রায় তার সঙ্গে সঙ্গে টুইট করে কংগ্রেসকে পাল্টা জোটবার্তা দেন সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম। ফল দুইয়ে দুইয়ে চার। অর্থাৎ, সিপিএম ও কংগ্রেসের জোট প্রায় পাকা। এমনই ধারণা রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
জোট হলে কে কত আসনে লড়বে, অর্থাৎ আসন রফা কী রকম হবে, তা নিয়ে জটিলতা দেখা দেবে কিনা, সে–সব পরের কথা। কিন্তু জোটের পক্ষে প্রাথমিক ভাবেই কংগ্রেস ও সিপিএম দুই দলই সদিচ্ছা দেখানোয় এবার বাংলার বিধানসভা নির্বাচন ত্রিমুখি হতে চলেছে। একদিকে অবশ্যই শাসক দল তৃণমূল। অন্যদিকে, এই মুহূর্তে প্রধান বিরোধী পক্ষ বিজেপি। আর এবার এসে গেল তৃতীয় পক্ষ। যে পক্ষে রয়েছে কংগ্রেস ও বাম। তৃতীয় পক্ষে বামেদের তরফে অন্য দলগুলি কী ভূমিকা নেয়, সেইসব বিষয় এখনও স্পষ্ট না হলেও সিপিএমের বক্তব্য পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদেই কংগ্রেস ও সিপিএম কাছাকাছি এসেছে। যদিও এতে লাভবান হবে তৃণমূলই। কারণ, বিরোধী ভোট ভাগ হয়ে যাবে বিজেপি এবং সিপিএম–কংগ্রেস জোটের মধ্যে।
সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সেলিম টুইটে লিখেছেন, ‘প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ায় অধীর চৌধুরিকে শুভেচ্ছা জানাই। কেন্দ্রের বিজেপি এবং রাজ্যের তৃণমূলের জনস্বার্থ বিরোধী নীতির বিরুদ্ধে বাম এবং কংগ্রেস যৌথভাবে আগেও একাধিক কর্মসূচি নিয়েছে। আগামিদিনগুলিতেও একই ভাবে এই দুটি দলের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়াই করবে।’ এখানেই থেমে যাননি তিনি। ভিডিও বার্তায় তিনি সিপিএমের দৃষ্টিভঙ্গী পরিষ্কার করে দেন। তিনি বলেন, ‘নানা ইস্যুতে মানুষ আজ কেন্দ্র এবং রাজ্যের সরকারের ওপর বিরক্ত। তারা নিজেদের মতো করে এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করে চলেছে। সেই লড়াইয়ে তাদের পাশে রয়েছে সিপিএম। কংগ্রেসও পাশাপাশি বারবার এগিয়ে এসেছে। এর ফলে সিপিএম ও কংগ্রেসের মধ্যে বোঝাপড়া যথেষ্ট বেড়েছে। আজ পশ্চিমবাংলাকে রক্ষা করতে কংগ্রেস, সিপিএম এবং অন্য সব বামপন্থী দলকে এক হয়ে লড়াই করতে হবে। যাতে বিজেপি এবং তৃণমূলের বিরোধী ভোটগুলি সব এক জায়গায় হতে পারে।’
কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট সে ভাবে সাফল্যের মুখ দেখেনি। এ বিষয়ে সেলিম বলেছেন, ‘যে কোনও কারণেই হোক লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস ও সিপিএমের জোট পরিণতি পায়নি। ফলে তার প্রভাব পড়েছিল ভোটের ফলে। রাজ্যের পক্ষেও তা ইতিবাচক হয়নি। বিজেপি ও তৃণমূল বিরোধী ভোটগুলি এক জায়গায় হতে পারেনি। ফলে বিজেপি ও তৃণমূলের মধ্যে ভোট অর্ধেক অর্ধেক করে ভাগ হয়ে গিয়েছে। এটা যাতে আর না হয়, তা আমাদের নিশ্চিত করতে হবে। কারণ, লোকসভা ভোটের পর আমরা দেখেছি, মানুষের বিপদের সময় ওই দুটো দলের কাউকেই দেখা যায়নি। তাই বাম ও কংগ্রেসকে এবার একসঙ্গে পথ চলতে হবে।’ মহম্মদ সেলিমের এই জোটবার্তার জবাব প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই দিয়েছেন অধীর চৌধুরি। তিনি বলেছেন, ‘সেলিমের বক্তব্য যথেষ্ট ইতিবাচক। আমার বিশ্বাস, আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম এবং কংগ্রেস একসঙ্গেই লড়াই করবে।’
রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল এখনও কংগ্রেস ও সিপিএমের এই জোট প্রচেষ্টা সম্পর্কে কোনও রকম প্রতিক্রিয়া জানায়নি। প্রকাশ্যে বিজেপির কোনও নেতাও এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে বিজেপির রাজ্য দফতর সূত্রে বলা হয়েছে, সিপিএম এবং কংগ্রেসের এই জোট আসলে তৃণমূলেরই উদ্যোগ। তৃণমূল জানে, তারা এবার আর নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় ফিরে আসতে পারবে না। তাই বিজেপিকে রুখতে সিপিএম ও কংগ্রেসকে ব্যবহার করতে চাইছে, যাতে বিরোধী ভোট বিজেপির পাশাপাশি সিপিএম ও কংগ্রেস জোটের মধ্যে ভাগাভাগি হয়ে যায়। কিন্তু, রাজ্যের সাধারণ মানুষ বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি ওয়াকিবহাল। তারা আর সিপিএম ও কংগ্রেসকে ভোট দিয়ে নিজেদের ভোট নষ্ট করবেন না। তাঁরা তৃণমূলের বিরুদ্ধে সমস্ত ভোট বিজেপিকেই দেবেন।